রাসূল এবং কুরআন নাযিলের উদ্দেশ্য

রাসূল এবং কুরআন নাযিলের উদ্দেশ্য

মহান আল্লাহ তাআলা পবিত্র কুরআন কেন নাযিল করেছেন?

শুধু কুরআন শরীফ দেখে দেখে তেলাওয়াত করবেন, বছরে একবার রমজান মাসে কুরআন খতম করবেন, কুরআনের কিছু সূরা তেলাওয়াত করে মরা মানুষের কবরে সাওয়াব পৌঁছে দিবেন, মরা লোকের পাশে বসে কুরআন তেলাওয়াত করবেন, কুরআনের সূরা পড়ে ঝাড়ফুঁক করবেন, আজীবন সকালবেলা শুধু সূরা ইয়াসিন পাঠ করবেন, কুরআনের আয়াত দিয়ে তাবিজ লিখবেন, কুরআন পাঠ শেষে তাকিয়ার উপর রেখে দিবেন।

না শুধু এজন্য মহান আল্লাহ তাআলা পবিত্র কুরআন নাযিল করেননি। কুরআন সম্পর্কে এগুলো আমাদের সম্পূর্ণ অজ্ঞতাপ্রসূত ধারণা। এগুলোতো করবেনই কিন্তু এই কুরআন নাযিলের উদ্দেশ্য আলাদা। আল্লাহ তাআলা পবিত্র কুরআন নাযিল করেছেন তা অনুসরণ করার জন্য। বাস্তব জীবনে মেনে চলার জন্য।

মহান আল্লাহ তাআলা পবিত্র কুরআনে রাসূল এবং কুরআন নাযিলের উদ্দেশ্য সম্পর্কে বলেছেনঃ

তিনিই তাঁর রাসূলকে প্রেরণ করেছেন হিদায়াত ও সত্য দীনসহ সকল দীনের ওপর একে বিজয়ী করার জন্যে, যদিও মুশরিকরা তা অপছন্দ করে।
[সূরা আস সাফ, আয়াতঃ  ৯]

মহান আল্লাহ তাআলা উক্ত আয়াতে বলেছেন, দীনকে সকল দীনের উপর বিজয়ী করার জন্য রাসূল সাঃ কে প্রেরণ করেছেন। দীন শব্দের অর্থ হচ্ছে, জীবন ব্যবস্হা। ইংরেজিতে বলা হয়, Constitution বা সংবিধান।  তাহলে পৃথিবীতে মানব রচিত যত সংবিধান আছে সবগুলোকে বাতিল করে কুরআনের সংবিধানকে বিজয়ী করার দায়িত্ব দিয়ে মহান আল্লাহ তাআলা
রাসূল সাঃ কে প্রেরণ করেছেন।

এখন রাসূল সাঃ আমাদের থেকে চলে গেছেন কিন্তু তাঁর এই দায়িত্ব আমাদের উপর ন্যাস্ত করে গেছেন। আমরা তাঁর উম্মত হয়ে সর্বযুগে পবিত্র কুরআনকে মানুষের তৈরী করা সংবিধানের উপরে বিজয়ী করার জন্য সর্বাত্বক চেষ্টা চালিয়ে যাবো। এটাই হবে আমাদের
নবী ওয়ালা কাজ।

এখন এই কাজ করতে গেলে যারা মুশরেক আল্লাহর কুরআনকে সংবিধান মানেনা, মানুষের তৈরী করা সংবিধানকে শ্রেষ্ঠ মনে করে, তাদের অন্তরে অনেক জ্বালা-পোড়া করবে, তারপরেও আল্লাহর দেয়া জীবন ব্যবস্হাকে বিজয়ী করতে হবে। এটাই মহান আল্লাহ তাআলার নির্দেশ।

ইসলামী রাষ্ট্রের চার দফা কাজঃ

মুমিনগণ যখন রাষ্ট্রের ক্ষমতা লাভ করবেন তখন তারা বিশেষভাবে চারটি কাজ করবেন।

১. আইন করে নামায কায়েম করবেন। নামায আদায় করা তখন বাধ্যতামূলক। নামায হচ্ছে, জান্নাতের চাবি। এই চাবি অর্জনে রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে সহায়তা করা হবে।

২. আইন করে যাকাত আদায় করবেন। যাকাত প্রদান করা তখন বাধ্যতামূলক হবে। ধনীরা যাকাত আদায় করতে গড়িমসি করলে তাদের ব্যাংকে রাখা টাকা থেকে বছর শেষে হিসেব করে যাকাতের টাকা গরীব দুঃখীদের মাঝে বন্টন করা হবে। যার ফলে দেশে আর কোন গরীব লোক থাকবে না। দারিদ্রতার হার শূন্যের কোটায় নেমে আসবে।

৩. আইন করে সৎকাজের প্রচলন করা হবে। সবাইকে নেকের কাজ করতে বাধ্য করা হবে।

৪. আইন করে সমস্ত অন্যায় ও পাপাচার বন্ধ করা হবে। দেশে আর কোন গোনাহের কাজ চলবে না। সবাই শান্তি পাবে নিরাপত্তা লাভ করবে।

মহান আল্লাহ তাআলা সূরা হজ্জের ৪১ নাম্বার আয়াতে এই দিকনির্দেশনা দান করেছেনঃ
      
তারা এমন যে, আমি যদি দুনিয়ায় তাদেরকে ক্ষমতা দান করি, তবে তারা নামায কায়েম করবে, যাকাত আদায় করবে, মানুষকে সৎকাজের আদেশ করবে ও অন্যায় কাজে বাধা দেবে। সব পরিণতি আল্লাহরই হাতে।

[আল হাজ্জ্ব, আয়াতঃ ৪১]

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url