গীবতের পরিণতি ভয়াবহ

গীবতের পরিণতি ভয়াবহ


গীবত এক ভয়ংকর অপরাধ!

মহান আল্লাহ তাআলা পবিত্র কোরআনে ইরশাদ করেছেনঃ

یٰۤاَیُّہَا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوا اجۡتَنِبُوۡا کَثِیۡرًا مِّنَ الظَّنِّ ۫ اِنَّ بَعۡضَ الظَّنِّ اِثۡمٌ وَّلَا تَجَسَّسُوۡا وَلَا یَغۡتَبۡ بَّعۡضُکُمۡ بَعۡضًا ؕ اَیُحِبُّ اَحَدُکُمۡ اَنۡ یَّاۡکُلَ لَحۡمَ اَخِیۡہِ مَیۡتًا فَکَرِہۡتُمُوۡہُ ؕ وَاتَّقُوا اللّٰہَ ؕ اِنَّ اللّٰہَ تَوَّابٌ رَّحِیۡمٌ

হে মুমিনগণ! অনেক রকম অনুমান থেকে বেঁচে থাক। কোন কোন অনুমান গুনাহ। তােমরা কারও গােপন ত্রুটির অনুসন্ধানে পড়বে না। এবং তোমাদের একে অন্যের গীবত করবে না। তােমাদের মধ্যে কেউ কি তার মৃত ভাইয়ের গােশত খেতে পছন্দ করবে? এটাকে তাে তােমরা ঘৃণা করে থাক। তােমরা আল্লাহকে ভয় কর। নিশ্চয়ই আল্লাহ অতি তাওবা কবুলকারী, পরম দয়ালু। (আল হুজুরাত-১২)

গীবত কি?


গীবত হচ্ছে, একে অন্যের পিছনে অন্য কারো নিকট খারাপ বলা, সমালোচনা করা, নিন্দা করা, যদিও উক্ত দোষ ত্রুটি তার ভিতরে থাকে।

হাদীসঃ

আবূ হুরাইরা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, একদা আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, “তোমরা কি জান, গীবত কাকে বলে?” লোকেরা বলল, ‘আল্লাহ ও তাঁর রসূল অধিক জানেন।’ তিনি বললেন, “তোমার ভাই যা অপছন্দ করে, তাই তার পশ্চাতে আলোচনা করা।” বলা হল, ‘আমি যা বলি, তা যদি আমার ভাইয়ের মধ্যে থাকে, তাহলে আপনার রায় কি? (সেটাও কি গীবত হবে?)’ তিনি বললেন, “তুমি যা (সমালোচনা ক‘রে) বললে, তা যদি তার মধ্যে থাকে, তাহলেই তার গীবত করলে। আর তুমি যা (সমালোচনা ক‘রে) বললে, তা যদি তার মধ্যে না থাকে, তাহলে তাকে অপবাদ দিলে।”

(মুসলিম ২৫৮৯, তিরমিযী ১৯৩৪, আবূ দাউদ ৪৮৭৪, আহমাদ ৭১০৬, ৮৭৫৯, ২৭৪৭৩, ৯৫৮৬, দারেমী ২৭১৪)

গীবত করার অপরাধঃ


মহান আল্লাহ তাআলা বলছেন, তোমরা কি তোমাদের মৃত ভাইয়ের গোশত ভক্ষণ করা পছন্দ করবে?
তাহলে বুঝা গেলো যে ব্যক্তি কারো গীবত করে সে যেনো তার মৃত ভাইয়ের গোশত ভক্ষণ করলো।
একে-তো ইসলাম ধর্মে মৃত প্রাণীর গোশত ভক্ষণ করা হারাম। তারপরে সেটা যদি হয় কোন হারাম প্রাণী মানুষের। তদুপরি সেটা যদি হয় তার মৃত ভাইয়ের গোশত! চিন্তা করে দেখেছেন এটা কত বড় মারাত্মক গোনাহের কাজ?

হাদীসঃ

আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-কে বললাম, ‘আপনার জন্য সাফিয়ার এই এই হওয়া যথেষ্ট।’ (কোন কোন বর্ণনাকারী বলেন, তাঁর উদ্দেশ্য ছিল, সাফিয়া বেঁটে।) এ কথা শুনে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম) (আমাকে) বললেন, “তুমি এমন কথা বললে, যদি তা সমুদ্রের পানিতে মিশানো হয়, তাহলে তার স্বাদ পরিবর্তন করে দেবে!”
আয়েশা (রাঃ) বলেন, একদা তাঁর নিকট একটি লোকের পরিহাসমূলক ভঙ্গি নকল করলাম। তিনি বললেন, “কোন ব্যক্তির পরিহাসমূলক ভঙ্গি নকল করি আর তার বিনিময়ে এত এত পরিমাণ ধনপ্রাপ্ত হই, এটা আমি আদৌ পছন্দ করি না।”

(আবূ দাউদ, তিরমিযী হাসান সহীহ) (আবূ দাউদ ৪৮৭৫, তিরমিযী ২৫০২, আহমাদ ২৫০৩২)

আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন, “যখন আমাকে মি‘রাজে নিয়ে যাওয়া হল, সে সময় এমন ধরনের কিছু মানুষের নিকট দিয়ে অতিক্রম করলাম, যাদের নখ ছিল তামার, তা দিয়ে তারা নিজেদের মুখমণ্ডল খামচে ক্ষত-বিক্ষত করছিল। আমি, প্রশ্ন করলাম, ওরা কারা? হে জিব্রীল! তিনি বললেন, ওরা সেই লোক, যারা মানুষের মাংস ভক্ষণ করত ও তাদের সম্ভ্রম লুটে বেড়াত।”

(সহীহুল বুখারী ৬৫৮১, ৭৫১৭, আবূ দাউদ ৪৭৪৮, ৪৮৭৮)

৬টি কারণে গীবত করা বৈধঃ


১। অত্যাচার ও নির্যাতন: নির্যাতিত ও অত্যাচারিত ব্যক্তির পক্ষে বৈধ যে, সে শাসক, বিচারক প্রমুখ (প্রভাবশালী) ব্যক্তি যাঁরা অত্যাচারীকে উচিত সাজা দিয়ে ন্যায় বিচার করার কর্তৃত্ব ও ক্ষমতা রাখেন তাঁদের নিকট নালিশ করবে যে, ‘অমুক ব্যক্তি আমার উপর এই অত্যাচার করেছে।

২। মন্দ কাজের অপসারণ ও পাপীকে সঠিক পথ ধরানোর কাজে সাহায্য কামনা। বস্ত্ততঃ শরীয়ত বহিঃর্ভূত কর্মকাণ্ড বন্ধ করার ব্যাপারে শক্তিসম্পন্ন ব্যক্তিকে গিয়ে বলবে যে, ‘অমুক ব্যক্তি মন্দ কাজে লিপ্ত। সুতরাং আপনি তাকে তা থেকে বাধা দিন’ ইত্যাদি। তবে এর পিছনে কেবল অন্যায় ও মন্দ কাজ থেকে বাধা দেওয়ার একমাত্র উদ্দেশ্য হতে হবে; অন্যথা তা হারাম হবে।

৩। ফতোয়া জানা। মুফতি (বা আলেমের) নিকট গিয়ে বলবে, ‘আমার পিতা আমার ভাই বা আমার স্বামী অথবা অমুক ব্যক্তি এই অন্যায় অত্যাচার আমার প্রতি করেছে। তার কি কোন অধিকার আছে? (এমন করার অধিকার যদি না থাকে) তবে তা থেকে মুক্তি পাবার এবং অন্যায়ের প্রতিকার করার ও নিজ অধিকার অর্জন করার উপায় কী?’ অনুরূপ আবেদন পেশ করা। এরূপ বলা প্রয়োজনে বৈধ। তবে সতর্কতামূলক ও উত্তম পন্থা হল, নাম না নিয়ে যদি বলে, ‘এক ব্যক্তি, বা লোক বা স্বামী এই করেছে, সে সম্পর্কে আপনি কী বলেন?’ নির্দিষ্ট কোন ব্যক্তির নাম না নিয়ে এরূপ বললে উদ্দেশ্য পূরণ হয়ে যাবে। এ সত্ত্বেও নির্দিষ্ট ক‘রে নাম নিয়ে ফতোয়া জিজ্ঞাসা করা বৈধ। যেমন এ মর্মে পরবর্তীতে হিন্দের হাদীস উল্লেখ করব---ইনশা আল্লাহ তা'আলা।

৪। মুসলিমদেরকে মন্দ থেকে সতর্ক করা ও তাদের মঙ্গল কামনা করা। এটা অনেক ধরণের হতে পারে।
 
৫। প্রকাশ্যভাবে কেউ পাপাচরণ বা বিদআতে লিপ্ত হলে তার কথা বলা। যেমন প্রকাশ্যভাবে মদ্য পান করলে, লোকের ধন অন্যায়ভাবে আত্মসাৎ করলে, বলপূর্বক ট্যাক্স বা চাঁদা আদায় করলে, অন্যায়ভাবে যাকাত ইত্যাদি অসূল করলে, অন্যায় কাজের কর্তৃত্ব করলে, তার কেবল সেই প্রকাশ্য অন্যায়ের কথা উল্লেখ করা বৈধ। (যাতে তার অপনোদন সম্ভব হয়) পক্ষান্তরে তার অন্যান্য গোপন দোষ-ত্রুটি উল্লেখ করা বৈধ নয়। তবে যদি উল্লিখিত কারণসমূহের মধ্যে অন্য কোন কারণ থাকে, যেমন আমরা পূর্বে বর্ণনা করেছি, তাহলে তাও ব্যক্ত করা বৈধ হবে।

৬। প্রসিদ্ধ নাম ধরে পরিচয় দেওয়া। সুতরাং যখন কোন মানুষ কোন মন্দ খেতাব দ্বারা সুপরিচিত হয়ে যাবে; যেমন চোখ-ওঠা, খোঁড়া, কালা, অন্ধ, টেরা ইত্যাদি তখন সেই পরিচায়ক খেতাবগুলি উল্লেখ করা সিদ্ধ। তবে অবমাননা বা হেয় প্রতিপন্ন করার অভিপ্রায়ে সে সব উল্লেখ করা নিষিদ্ধ। পক্ষান্তরে উক্ত পদবী ছাড়া অন্য শব্দ বা নাম দ্বারা যদি পরিচয় দান সম্ভব হয়, তাহলে সেটাই সব চাইতে উত্তম।
এই হল ছয়টি কারণ, যার ভিত্তিতে গীবত করা বৈধ।
পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
No Comment
Add Comment
comment url