নামাযের ফজিলত

নামাযের ফজিলত


ঈমানের পরে দ্বিতীয় স্তম্ভ হচ্ছে, পাঁচ ওয়াক্ত নামায আদায় করা। একজন মুসলিমের জন্য নির্ধারিত সময়ে দিনে ও রাতে পাঁচ ওয়াক্ত নামায আদায় করা ফরয। নামায সম্পর্কে মহান আল্লাহ তাআলা পবিত্র কোরআনে অসংখ্যবার নির্দেশ করেছেন। হাদীস শরীফে রাসূল সাঃ নামায সম্পর্কে বিস্তারিত বর্ণনা করেছেন। যে ব্যক্তি পাঁচ ওয়াক্ত নামায যথাসময়ে আদায় করবে আল্লাহ তাআলা তাকে সর্বোত্তম পুরুষ্কার দান করবেন। নামাযের ফজিলত সম্পর্কে এখানে কিছু হাদীস উল্লেখ করা হলো।

নামায সম্পর্কে কুরআনের নির্দেশঃ


মহান আল্লাহ বলেছেন,

এবং তোমরা সালাত কায়েম কর, যাকাত আদায় কর ও রুকূ‘কারীদের সাথে রুকূ‘ কর।
(আল বাকারা-৪৩)

অর্থাৎ, নিশ্চয় নামায অশ্লীলতা ও মন্দ কাজ হতে বিরত রাখে।
(আনকাবূত ৪৫ আয়াত)

তোমরা নামাযসমূহের প্রতি পুরোপুরি যত্নবান থেক এবং (বিশেষভাবে) মধ্যবর্তী নামাযের প্রতি এবং আল্লাহর সামনে আদবের সাথে অনুগত হয়ে দাঁড়িয়ো।
(আল বাকারা-২৩৮)

নামায সম্পর্কে হাদীসে রাসূল সাঃ বর্ণনা করেছেনঃ


আনাস (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, তোমাদের দুনিয়ার মধ্যে আমার কাছে স্ত্রী ও খোশবুকে প্রিয় করা হয়েছে। আর নামাযকে করা হয়েছে আমার চক্ষুশীতলতা।

(আহমাদ ১২২৯৩, নাসাঈ ৩৯৩৯, হাকেম ২৬৭৬, সহীহুল জামে’ ৩১২৪)

আবূ হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আদম-সন্তান এমন কোন কাজ করেনি, যা নামায, সদ্ভাব প্রতিষ্ঠা ও সচ্চরিত্রতা থেকে অধিক শ্রেষ্ঠ হতে পারে।

(বুখারী তারীখ, বাইহাক্বীর শুআবুল ঈমান ১১০৯১, সিলসিলা সহীহাহ ১৪৪৮)

আব্দুল্লাহ বিন আমর (রাঃ) বলেন, এক ব্যক্তি আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট উপস্থিত হয়ে জিজ্ঞাসা করল, সর্বশ্রেষ্ঠ আমল কী? উত্তরে তিনি বললেন, নামায। সে আবার বলল, তারপর কী? তিনি বললেন, নামায। সে আবার বলল, তারপর কী? তিনি বললেন, নামায। এইরূপ তিনবার বললেন।

(আহমাদ ৬৬০২, ইবনে হিব্বান ১৭২২, সহীহুত তারগীব ৩৭৮)

নামাযের মাধ্যমে গোনাহ থেকে পবিত্রতা অর্জন হয়ঃ

আবূ হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে এ কথা বলতে শুনেছেন, আচ্ছা তোমরা বল তো, যদি কারোর বাড়ির দরজার সামনে একটি নদী থাকে, যাতে সে প্রতিদিন পাঁচবার ক’রে গোসল করে, তাহলে তার শরীরে কোন ময়লা অবশিষ্ট থাকবে কি? সাহাবীরা বললেন, (না,) কোন ময়লা অবশিষ্ট থাকবে না। তিনি বললেন, পাঁচ ওয়াক্তের নামাযের উদাহরণও সেইরূপ। এর দ্বারা আল্লাহ পাপরাশি নিশ্চিহ্ন করে দেন।

(বুখারী ৫২৮, মুসলিম ১৫৫৪, তিরমিযী ২৮৬৮, নাসাঈ ৪৬২)

জাবের (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, পাঁচ ওয়াক্তের নামাযের উদাহরণ ঠিক প্রবাহিত নদীর ন্যায়, যা তোমাদের কোন ব্যক্তির দরজার পাশে থাকে; যাতে সে প্রত্যহ পাঁচবার করে গোসল করে থাকে।

(মুসলিম ১৫৫৫)

আবূ হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, পাঁচ ওয়াক্তের নামায, এক জুমআহ থেকে পরবর্তী জুমআহ পর্যন্ত এর মধ্যবর্তী সময়ে যেসব পাপ সংঘটিত হয়, সে সবের মোচনকারী হয় (এই শর্তে যে,) যদি মহাপাপে লিপ্ত না হয়।

(মুসলিম ৫৭২, তিরমিযী ২১৪)

উসমান ইবনে আফফান (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছি যে, যে ব্যক্তি ফরয নামাযের জন্য ওযূ করবে এবং উত্তমরূপে ওযূ সম্পাদন করবে। (অতঃপর) তাতে উত্তমরূপে ভক্তি-বিনয়-নম্রতা প্রদর্শন করবে এবং উত্তমরূপে ‘রুকু’ সমাধা করবে। তাহলে তার নামায পূর্বে সংঘটিত পাপরাশির জন্য কাফফারা (প্রায়শ্চিত্ত) হয়ে যাবে; যতক্ষণ মহাপাপে লিপ্ত না হবে। আর এ (রহমতে ইলাহীর ধারা) সর্বযুগের জন্য প্রযোজ্য।

(মুসলিম ৫৬৫)

আবু উসমান (রহঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা একটি গাছের নিচে আমি সালমান (রাঃ) এর সাথে (বসে) ছিলাম। তিনি গাছের একটি শুষ্ক ডাল ধরে হিলিয়ে দিলেন। এতে ডালের সমস্ত পাতাগুলি ঝরে গেল। অতঃপর তিনি বললেন, হে আবু উসমান! তুমি আমাকে জিজ্ঞাসা করবে না কি যে, কেন আমি এরূপ করলাম? আমি বললাম, কেন করলেন? তিনি বললেন, একদা আমিও আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথে গাছের নিচে ছিলাম। তিনি আমার সামনে অনুরূপ করলেন; গাছের একটি শুষ্ক ডাল ধরে হিলিয়ে দিলেন। এতে তার সমস্ত পাতা খসে পড়ল।

অতঃপর বললেন, হে সালমান! তুমি আমাকে জিজ্ঞাসা করবে না কি যে, কেন আমি এরূপ করলাম? আমি বললাম, কেন করলেন? তিনি উত্তরে বললেন, মুসলিম যখন সুন্দরভাবে ওযু করে পাঁচ ওয়াক্ত নামায পড়ে তখন তার পাপরাশি ঠিক ঐভাবেই ঝরে যায় যেভাবে এই পাতাগুলো ঝরে গেল। আর তিনি এই আয়াত পাঠ করলেন,

অর্থাৎ, আর তুমি দিনের দু’ প্রান্তভাগে ও রাতের প্রথামাংশে নামায কায়েম কর। পুণ্যরাশি অবশ্যই পাপরাশিকে দূরীভূত করে দেয়। (আল্লাহর) স্মরণকারীদের জন্য এ হল এক স্মরণ। (সূরা হূদ ১১৪ আয়াত)

(আহমাদ ২৩৭০৭, নাসাঈ, ত্বাবারানী ৬০২৮, সহীহ তারগীব ৩৬৩)

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url